Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

প্রাণী ও পোলট্রিসম্পদ ঃ পুষ্টি উন্নয়নের সম্ভাবনা

ড. নাথুরাম সরকার১ ড. গৌতম কুমার দেব২


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নলালিত সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। আগামী ২০৪১ সালের উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন।  উন্নত দেশে উপনীত হওয়ার জন্য সকল সেক্টরের সুষম উন্নয়ন প্রয়োজন। সরকার সেই লক্ষ্যে   কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।  কর্মপরিকল্পনগুলোর মধ্যে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, ভিশন ২০২১,  বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ (এসডিজি), ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান অন্যতম। সরকারের ভিশন ২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে ৮৫% জনগণের জন্য প্রাণিজ পুষ্টি প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। এসডিজিতে উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়া এবং প্রতিটি মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উৎপাদন ন্যূনতম দ্বিগুণ করা আবশ্যক। বর্তমান সরকারের গৃহীত নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। সেইসাথে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ দুধ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। চামড়াসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।


গবাদিপশু ও পোলট্রি প্রজাতির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি
বিগত ২০১০ থেকে ২০২০ সালে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগি ও হাঁসের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ০.৫৮, ০.৭৪, ০.৯৬, ১.৮৬, ২.৩২ এবং ২.৯০%। বাংলাদেশ ছাগলের সংখ্যা ও মাংস উৎপাদনে চতুর্থ এবং গবাদিপশু উৎপাদনে বিশে^ ১২তম অবস্থান। ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও) ও আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তির ২০১৫ সালের তথ্য মতে বাংলাদেশের বøাক বেঙ্গল ছাগল বিশে^ অন্যতম সেরা মাংস ও চামড়া উৎপাদনকারী জাত।


জাতীয় অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ উপখাতের অবদান
স্থির মূল্যের ভিত্তিতে বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরের জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের প্রাক্বলিত শতকরা অবদান হচ্ছে ১.৪৩ ভাগ। যা টাকার অংকে প্রায় ৪৬,৬৭৩ কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৩.০৪ ভাগ। জাতীয় জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে কমলেও কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মূল্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান শতকরা ১৩.৪৪ ভাগ।  ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় শতকরা ২.৪৯ ভাগ অর্থাৎ ১.০১ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার সমপরিমাণ টাকা আসে বিদেশে চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে বাংলাদেশ চামড়াজাত পণ্য হতে ২০২৪.১০ কোটি, মাংস ও মাংসজাত উপজাত হতে ৯.৮৮ কোটি, প্রক্রিয়াজাত তরল দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য হতে ১৫.৯৭ কোটি এবং প্রাণিজাত উপজাত হতে ১২৬.৮১ কোটিসহ সর্বমোট ২১৭৬.৭৭ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।


প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ
এফএও এর সুপারিশ অনুযায়ী একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের প্রতিদিন ন্যূনতম ২৫০ মিলি দুধ ও ১২০ গ্রাম মাংস এবং বছরে ১০৪টি করে ডিম খাওয়া প্রয়োজন। বর্তমান দেশজ উৎপাদন দুধ, মাংস ও ডিমের ন্যূনতম জাতীয় চাহিদার শতকরা ৭০.২৫, ১০৪.১৫ এবং ৯৯.৮৯ ভাগ সরবরাহ করছে। দেশ এখন মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত ২০১০-১১ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত দেশে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৩৬২.০৩, ৩৮৫.৬৩ এবং ২৮৫.৫৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।  


দুগ্ধ শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে দেশে দুধের চাহিদা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডেইরি শিল্প বিপুলসংখ্যক বেকার যুবক-যুবতির কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য বিমোচনসহ পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণে অবদান রাখছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এক টন দুধ উৎপাদন এবং ইহার প্রক্রিয়াকরণ এবং বাজারজাতের সাথে সম্পৃক্ত ৩৭টি শ্রমজীবী পরিবার তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। বর্তমানে শিশু খাদ্যের জন্য গুঁড়া দুধ আমদানিতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। ডেইরি শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে দেশে শিশু খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব হলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে দুধ এবং দুধজাত পণ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। সরকার দেশীয় গবাদি পশুর জাত উন্নয়নের জন্য নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য যে, ডেইরি শিল্পের বিকাশে সরকার বিগত ২০১৮ সাল থেকে দেশে ৫% হারে স্বল্প সুদে প্রতি বছর ২০০ কোটি টাকা করে উদ্যোক্তাগণকে ঋণ প্রদান করছেন। মাংস শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা


দেশে উৎপাদিত মাংসের প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এবং ৪০ ভাগ যোগান দেয় পোল্ট্রি। বর্তমানে দেশে  বছরব্যাপী হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে বিদেশে মাংস রপ্তানির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এফএমডি ও ক্ষুরারোগ মুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, মাংস ও মাংসজাত পণ্যের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ^মানের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ল্যাবরেটরি স্থাপন, গরুর জাত উন্নয়নসহ নানাধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন। উপক‚লীয় চরাঞ্চলগুলিতে ঘাস চাষসহ ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যম মহিষ ও ভেড়াগুলোকে হৃষ্টপুষ্টকরণের আওতায় এনে মাংস উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে।


পোলট্রি শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা
দেশে উৎপাদিত মোট ডিমের প্রায় ৫০ শতাংশ আসে বাণিজ্যিকভাবে মুরগি থেকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ আসে দেশী মুরগি ও হাঁস থেকে। মানুষের আর্থিক উন্নয়নের ফলে ডিম ও মাংস খাওয়ার পাশাপাশি মুরগির মাংসভিত্তিক ফাস্ট ফুড গ্রহণের প্রবণতা উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশে ডিম ও ব্রয়লার মাংসের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি করছে। দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় বর্তমানে দেশে পোলট্রি শিল্প একটি কাঠামোয় দাঁড়িয়েছে। দেশে চাহিদার সমপরিমাণ ব্রয়লার ও লেয়ার বাচ্চা উৎপাদন সক্ষমতা, খাদ্য উৎপাদন কারখানা/শিল্প গড়ে উঠা, খামারিদের আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনাজনিত জ্ঞান অর্জন, বাণিজ্যিক লেয়ারের ডিম ও ব্রয়লারের মাংস খাওয়ার প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পোল্ট্রির রেশন সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ খাদ্য উপাদান দেশে উৎপাদনসহ পোলট্রি শিল্পের সাথে সংযুক্ত খাতগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিতে পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।


প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা মহামারী
বিশ^ব্যাপী চলমান কোভিড-১৯ মহামারী এর প্রভাবে ডেইরি, পোলট্রি, মাংস, খাদ্যসহ অন্যান্য শিল্পগুলো বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশে কোভিড সংকট শুরুর প্রাথমিক পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ উৎপাদিত পণ্য দুধ, ডিম ও মাংস এবং এদের থেকে উৎপাদিত পণ্য ও উপজাতসমূহ সরবরাহের সাপ্লাই চেইন ভেঙে যায়। ফলশ্রæতিতে দুধ ও ডিমের বাজারমূল্য হঠাৎ করে কমে যায়। এতে করে প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক খামারি তাদের খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। যার প্রভাব পরবর্তীতে দেশের পোলট্রি ব্রিডিং খামারসহ পশু ও পোলট্রি খাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোভিডের পাশাপাশি উপকুলীয় অঞ্চলে আম্ফান এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে বন্যা হচ্ছে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব প্রাণিসম্পদ খাতে প্রতীয়মাণ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কন্ট্রোল রুম খোলার মাধ্যমে  প্রাণিসম্পদ খাতের নানাবিধ সংকট মোকাবেলা এবং প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ (দুধ, মাংস,  ডিম) সচল রাখার লক্ষ্যে দুধ, মাংস, ডিমসহ পোল্ট্রি ও পশু খাদ্য/বিভিন্ন উপকরণ, উৎপাদন, পরিবহণ এবং বাজারজাতকরণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। পোলট্র্রি ও দুগ্ধ শিল্পে সহায়তার জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে।


খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, সুষম পুষ্টি সরবরাহ, আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনের লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সরকারের সময়ে বিগত দশ বছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আঞ্চলিক কৃষি, কৃষক ও আবহাওয়াকে সম্পৃক্ত করে পরিবর্তনশীল প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় অঞ্চলভিত্তিক বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান সমুন্নত রাখতে সম্ভবপর হবে।

১মহাপরিচালক ২ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,বায়োটেকনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার,  ঢাকা ১৩৪১, ফোন : ৭৭৯১৬৭৬, ই-মেইল : ফম@নষৎর.মড়া.নফ

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon